ভালো ঘুম পেতে যা করণীয়

লেখক: উদ্ভাস | সঙ্কলনের দিন: জানুয়ারী 08, 2018

             ভালো ঘুম পেতে যা করণীয়

 

অনেক রাত পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে থেকেও ঘুমের দেখা নেই। যার ফলে দিনকে দিন চেহারাটাই কেমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নেতিয়ে পড়ছে শরীরটা। সারাদিন মেজাজটা উগ্র হয়ে থাকছে। খুব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে জীবনটা। ইস! যদি মন ভরে একটু ঘুমাতে পারতাম। কিন্তু চেষ্টাতো কম করছিনা, পারছি কই?

তোমার সমস্যাগুলো যদি হয় এরকম, তবে  তোমার জন্যই এই লেখাটি। কিভাবে ভালো ঘুমিয়ে শরীরকে সতেজ করবে, মনকে ভরিয়ে দেবে প্রশান্তিতে তারই কিছু কৌশল দেখানো হয়েছে লেখাটিতে। দেখে নিতে পারো এক নজরে-

 

ঘুমানোর জন্য আলাদা বেড:
আমরা অনেকেই যে বেডে শুয়ে ঘুমাই সে বেডে শুয়েই টিভি দেখি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই, আবার অনেকে সেখানে শুয়েই পড়ালেখা করি। কিন্তু, শুনলে অবাক হবে যে কার্যকরভাবে ঘুমের জন্য যা মোটেই ঠিক নয়। আসলে প্রকৃত অর্থে একই বেডে শুয়ে টিভি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা পড়ালেখা করা মানে হলো তোমার নিজের ঘুমকে তুমি নিজে গলা টিপে হত্যা করা। ঘুমের জন্য রাখা উচিত সম্পূর্ণ আলাদা একটি বেড। যেখানে তুমি কেবল ঘুমাবে, আর ভিন্ন কোন কাজ নয়। এর ফলে তুমি যখন সে বেডে ঘুমাতে যাবে তখন তোমার মস্তিষ্কই ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে; তুমি অনুভব করবে এক অমায়িক প্রশান্তি। অপরদিকে এর বিপরীত হলে, তুমি যখন শুবে তখন তোমার মস্তিষ্ক কনফিউজ হয়ে যাবে। যে ,তুমি এখন ঘুমাবে নাকি টিভি দেখবে। যা তোমাকে ভালো ঘুম পেতে বাধা সৃষ্টি করবে। তাই ফলপ্রসু ঘুমের জন্য রাখা উচিত আলাদা বেড।

 

আর্টিফিসিয়াল স্ক্রিন ত্যাগ করা:
প্রযুক্তি প্রসারের নেতিবাচক প্রভাবে আমরা দিন বা রাতের অধিকাংশ সময় ব্যয় করি মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা টিভি দেখার পেছনে। আমরা যত বেশি এগুলোর পিছনে সময় ব্যয় করি তত বেশি আমাদের মস্তিষ্কের উপর এক ধরণের চাপ পড়তে থাকে। আবার এসব আর্টিফিসিয়াল স্ক্রিন থেকে ক্রমাগত নির্গত হতে থাকে ক্ষতিকারক রশ্মি যা আমাদের চোখেরও ক্ষতি করে। যার ফলে আমাদের ভালো ঘুম পেতে বাধার সৃষ্টি হয়। তাই ভালো ঘুমের জন্য এসকল আর্টিফিসিয়াল স্ক্রিনগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। অন্তত ঘুমানোর ২ ঘন্টা আগেতো নয়ই।

টেনশন-ফ্রি থাকার চেষ্টা করো:
অতিরিক্ত টেনশন আমাদের মানসিক প্রশান্তি নষ্ট করে। যার ইফেক্ট আমাদের ঘুমের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। আমরা যখন অতিরিক্ত টেনশন করি তখন আমরা ঘুমাতে গেলেও ঘুমাতে পারিনা। কেননা তখন আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত থাকে না। যার ফলে আমরা অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থেকে বিছানায় গড়াগড়ি করি কিন্তু ঘুমাতে পারিনা। তাই যথাসম্ভব ঘুমাতে যাওয়ার আগে সকল টেনশনকে ছুড়ে ফেলা উচিত। প্রয়োজনে ঘুমানোর আগে হালকা মেডিটেশন করতে পারো যা সহজেই তোমাকে প্রশান্তি এনে দিতে পারে।

 

শোবার ঘরে সঠিক তাপমাত্রা:
আমরা যখন ঘুমাতে যাই তখন আমাদের দেহের তাপমাত্রা নিম্মমুখী হতে থাকে। এক্ষেত্রে রুমের তাপমাত্রা হওয়া উচিত শরীরের সাথে মানানসই। তা না হলে আমাদের ভালো ঘুম পেতে বাধার সৃষ্টি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভালো ঘুমের জন্য রুমের তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়া উচিত। রুমের তাপমাত্রা এর কম বা বেশি হলে তা ভালো ঘুমের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। তাই ভালো ঘুম পেতে হলে শোবার ঘরে সঠিক তাপমাত্রা অপরিহার্য।

 

থাকা চাই ঘুমের আদর্শ রুটিন:
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার জন্য থাকা চাই চমৎকার রুটিন। রুটিন ফলো করে আমরা যদি মাসখানেক সঠিক নিয়মে ঘুমাতে যাই এবং সকাল বেলায় ঘুম ছাড়ি, তবে পরবর্তী সময়ে আমাদের মস্তিষ্ক রুটিন ফলো করার জন্য আমাদের তাড়না দিতে থাকে, যা আমাদের রুটিন ফলো করতে সাহায্য করে। আর এভাবে আমরা যদি রোজ রুটিন ফলো করে ঘুমাই তবে আমরা ঘুমের মাঝে প্রশান্তি খুঁজে পাবো। যা আমাদের শারিরীক শক্তি, এবং মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায় সহজে। তাই ভালো ঘুমের জন্য থাকা চাই আদর্শ রুটিন।

 

ঘুমানোর জন্য উপযোগী পরিবেশ:
কার্যকর ঘুমের জন্য উপযোগী পরিবেশ খুব জরুরী। যেখানে, ঘুমের জন্য ব্যাঘাত হবে এমন বেশি তাপমাত্রা, অতিরিক্ত আলো এবং অতিরিক্ত শব্দ থাকা উচিৎ নয়। যে রুমে ঘুমাবে সে রুমে বেশি লোকের আনাগোনাও একদম নয়। ঘুমের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে রুমের পরিবেশই তোমাকে ঘুমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ঘুমানোর জন্য যাতে পরিবেশ হয় প্রশান্তিময়।

 

 

 

দিনের সময় আলোতে এবং রাতের সময় কম আলোতে থাকা:
দিনের সময় অন্ধকার পরিবেশে না থেকে আলোতে থাকা উচিত, যা আমাদেরকে রাতে ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য সাহায্য করে। ভালো ঘুমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের শরীরে
“Melatonin” নামে একটি হরমোনের ক্ষরণ হওয়া। আর এই গুরুত্বপূর্ণ হরমোনটি সরাসরি আলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই, দিনে যথাসম্ভব আলোতে থাকা আর রাতে যথাসম্ভব কম আলোতে থাকা উচিত। এর ফলে আমরা ফলপ্রসূ ঘুম পাবো এবং এতে আমাদের স্লিপ সাইকেলও বাধার সৃষ্টি হবে না।

 

অতিরিক্ত চা বা কফি ত্যাগ করা:
কোন কাজে আমাদের একাগ্রতার ঘাটতি হলে আমরা শরীরকে চাঙা করতে চা বা কফি পান করি। অনেকেরতো এসব ছাড়া একবারে দিনই চলেনা। কিন্তু অতিরিক্ত চা বা কফি পানে যে আমাদের অনেক ধরনের ক্ষতি হয়, তা আমাদের অনেকেরই অজানা। এর মধ্যে প্রধান ক্ষতিকর দিক হলো এগুলো আমাদের স্বাভাবিক ঘুমে বাধা সৃষ্টি করে। এগুলোতে থাকা ক্যাফেইন আমাদের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়, স্নায়ুকে করে উদ্দীপিত। যার ফলে আমাদের স্বাভাবিক ঘুমে বাধা সৃষ্টি হয়। তাই ভালো ঘুম পেতে হলে অতিরিক্ত চা বা কফি পান ত্যাগ করতে হবে।


< সকল পোষ্টে ফিরে চলুন